স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাসে ৮ টি পরামর্শ
সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার অন্যতম অংশ হলো স্বাস্থ্যকর এবং সুষম খাদ্য গ্রহন করা । উপরন্তু এটি কোনো কঠিন কাজ নয় । প্রথমত শুধু এই আটটি পরামর্শ অনুসরন করুন ।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসে করণীয় চাবিকাঠিসমুহ নিম্নরুপঃ
আপনি কতটুকু ক্রিয়াশীল সে অনুযায়ী সঠিক পরিমাণে ক্যালরি গ্রহন করুন । যাতে করে ব্যবহৃত শক্তির সাথে ভোগকৃত শক্তির ভারসাম্য আনয়ন করা সহজ হবে । যদি আপনি অধিক পরিমানে খাদ্য এবং পানীয় গ্রহন করে থাকেন তাহলে আপনার ওজন বৃদ্ধি পাবে । আর যদি আপনি স্বল্প পরিমানে খাদ্য এবং পানীয় গ্রহন করেন তাহলে আপনার স্বাস্থ্যহানি ঘটবে । একজন পুরুষের দৈনিক ২৫০০ ক্যালরি (১০,৫০০ কিলোজুল) এবং মহিলার ক্ষেত্রে ২০০০ ক্যালরি (৮,৪০০০কিলোজুল) গ্রহনের পরামর্শ দেওয়া হয় । অধিকাংশ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিই প্রয়োজনের অধিক ক্যালরি গ্রহন করে থাকেন এবং তাদের উচিত স্বল্প পরিমানে ক্যালরি গ্রহন করা । সব ধরণের খাবার খাবেন, এর মাধ্যমে আপনি সুষম এবং শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় সকল উপাদান গ্রহনে সক্ষম হবেন । এই পরামর্শ গুলো মূলত স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী বিষয়াবলী নির্বাচনে আপনার সহায়ক হবেঃ
প্রধানত শ্বেতসারযুক্ত খাদ্য গ্রহন করুন
যে সকল খাদ্য গ্রহন করা হয় তার তিনভাগের এক ভাগই শ্বেতসারযুক্ত খাদ্য দ্বারা পুরণ হয় । বিভিন্ন খাদ্যশস্য, আলু, পাস্তা, ভাত, রুটি শ্বেতসারযুক্ত খাদ্যের অন্তর্ভুক্ত । সম্পূর্ণরূপে খাদ্যশস্য (বা খোসাসহ আলু) নির্বাচন করতে হবে; যা অধিক আঁশযুক্ত এবং আপনাকে সম্পূর্ণভাবে পুষ্টি প্রদানে সক্ষম।
আমরা অনেকেই শ্বেতসারযুক্ত খাদ্য গ্রহন করে থাকি; প্রতিটি প্রধান ভোজনে অন্তত একটি শ্বেতসারযুক্ত খাদ্য রাখার চেষ্টা করুন । অনেকের ধারণা শ্বেতসার মেদ সৃষ্টি করে, কিন্তু শর্করা স্নেহজাতীয় খাদ্যের তুলনায় অর্ধেক মাত্রায় ক্যালরি সরবরাহ করে থাকে।
প্রচুর পরিমাণে সবজি এবং ফলমূল খান
দিনের খাবারের অন্তত পাঁচটি অংশে ফল এবং সবজি খাওয়ার সুপারিশ করা হয় । এটি যেমন শোনাচ্ছে তার চেয়ে সহজ । এক গ্লাস চিনিবিহিন ১০০% ফলের রস (১৫০ মিলি) এক অংশ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে এবং খাবারের মধ্যে সেদ্ধ সব্জিও গণনা করা যায় । আপনার নাস্তায় খাদ্যশস্যের উপর কেন একটি কলা টুকরো করে নিচ্ছেন না; কিংবা কেন আপনার মাঝ সকালের হালকা খাবারের পরিবর্তে টাটকা ফলের টুকরো বেছে নিচ্ছেন না?
প্রচুর পরিমানে মাছ খান
আমিষ এবং বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের উত্তম উৎস হলো মাছ । সপ্তাহে দুটি অংশে মাছ খাওয়ার সংকল্প করুন । অন্তত একটি অংশে তৈলাক্ত মাছ রাখবেন । তৈলাক্ত মাছে ওমেগা-৩ বিদ্যমান যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় । তাজা, হিমায়িত কিংবা টিনজাত মাছ বেছে নিতে পারেন তবে মনে রাখতে হবে টিনজাত মাছে প্রচুর পরিমানে লবণ বিদ্যমান থাকে। স্যামন, মিঠা পানির মাছ, সামুদ্রিক মাছ, টুনা, সার্ডিন তৈলাক্ত মাছের অন্তর্গত । অ-তৈলাক্ত মাছের মধ্যে বোয়াল, টিনজাত টুনা, কড, স্কেইট, হেইক, হ্যাডাক অন্যতম ।যদি আপনি নিয়মিত মাছ খেতে চান, তবে বিভিন্ন প্রকার মাছ নির্বাচন করতে পারেন ।
স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং চিনি গ্রহনের মাত্রা হ্রাস করুন
আমাদের খাদ্যতালিকায় কিছু পরিমাণে চর্বি থাকা প্রয়োজন । কিন্তু খাদ্যে চর্বির ধরণ ও পরিমাণের উপর নজর দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ।সম্পৃক্ত এবং অসম্পৃক্ত – মুলত এই দুই অবস্থায় খাদ্যে চর্বি বিদ্যমান। অধিক মাত্রায় সম্পৃক্ত চর্বি বা স্যাচুরেটেড ফ্যাট রক্তে কোলেস্টোরেলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে ।
বিভিন্ন ধরনের খাদ্যে চর্বি সম্পৃক্ত থাকে যেমন, পণির, কেক, মাখন, বিস্কুট, সসেজ, ক্রিম, লার্ড । এ ধরনের চর্বিজাতীয় খাদ্য গ্রহনের পরিমাণ কমানোর চেষ্টা করুন । এবং যে সকল খাদ্যে চর্বি সম্পৃক্ত থাকেনা সেগুলো নির্বাচন করুন যেমন, উদ্ভিজ তেল, তৈলাক্ত মাছ, ফলমুল ।
স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে স্বল্প পরিমানে উদ্ভিজ তেল ব্যবহার করুন এবং মাখন, ঘি এর ব্যবহার কমানোর চেষ্টা করুন । মাংস খাওয়ার সময় দৃশ্যমান চর্বি বাদ দিন।
মিষ্টিজাতীয় খাদ্য এবং পানীয়, এছাড়া অ্যালকোহল জাতীয় পানীয়তে উচ্চ মাত্রায় শক্তি বিদ্যমান (ক্যালরি ও কিলোজুল দ্বারা পরিমাপকৃত)। এগুলো ওজন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে । এগুলো খাওয়ার ফলে দাঁত ক্ষয়প্রাপ্ত হয় ।
চিনিযুক্ত কার্বোনেটেড পানীয় এবং অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় গ্রহণের পরিমান কমাতে হবে । নাস্তায় ব্যবহৃত চিনিযুক্ত খাদ্যশস্য, কেক বিস্কুট এবং পেস্ট্রি খাওয়ার পরিমান কমাতে হবে।যেগুলোতে অধিক চিনি ব্যবহার করা হয় , সেগুলো পরিহার করা উচিত । বরং কিছু খাদ্যে এমনিই চিনি পাওয়া যায় যেমন, ফল এবং দুধ । খাদ্যে চিনি কতটুকু বিদ্যমান তা পরীক্ষা করা যায় । প্রতি ১00 গ্রামে ২২.৫ গ্রাম এর বেশি চিনি থাকার অর্থ উচ্চ পরিমানে চিনিযুক্ত । পক্ষান্তরে, প্রতি ১০০ গ্রামে ৫ গ্রাম চিনির কম থাকলে সেই খাদ্যটিতে কম মাত্রায় চিনি বিদ্যমান ।
স্বল্প পরিমানে লবণ খাওয়ার চেষ্টা করুন
যদি আপনি খাদ্যে অতিরিক্ত লবণ যোগ নাও করেন তবুও অনেকক্ষেত্রে লবণ খাওয়া হয় । প্রায় তিন-চতুর্থাংশ পরিমান লবণ বিভিন্নভাবে গ্রহণ করে থাকি, যেমন- সকালের নাস্তার খাদ্যশস্য, স্যুপ , রুটি, সসের মাধ্যমে । অধিক পরিমানে লবণ গ্রহণ উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি করে । যে সকল ব্যক্তির উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তাদের হৃদরোগ অথবা স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে ।
কর্মঠ হোন এবং সঠিক ওজন লাভ করুন
স্বাস্থ্যকর এবং সুষম খাদ্য স্বাস্থ্য উপযোগী ওজন রক্ষণাবেক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে, যা সার্বিকভাবে ভাল স্বাস্থ্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ । অতিশয় স্থুলতা স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটায় যেমন, টাইপ- ২ ডায়াবেটিস কতিপয় ক্যান্সার হৃদরোগ এবং স্ট্রোক হতে পারে। স্বল্প ওজনও স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে ।ওজন পরিমাপকের সাহায্যে পরীক্ষা করুন আপনি সঠিক ওজনের অধিকারী কিনা ।
অধিকাংশ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির ওজন কমানোর প্রয়োজন হয়, এটি সম্ভব কম ক্যালরি গ্রহণ করার মাধ্যমে । যদি আপনি ওজন কমানোর চেষ্টা করে থাকেন, তবে চেষ্টা করুন কম পরিমানে খাওয়ার এবং বেশি কর্মঠ হয়ে ওঠার । স্বাস্থ্যকর এবং সুষম খাদ্য এক্ষেত্রে সহায়ক: উচ্চ মাত্রার চর্বি এবং চিনি জাতীয় খাদ্য পরিহার করুন এবং প্রচুর সবজি ও ফল খান।
শরীরচর্চা
আপনাকে ওজন কমাতে এবং স্বাস্থ্যসম্মত ওজনের রক্ষণাবেক্ষণে সাহায্য করবে । সচেতন হওয়ার মানে ঘন্টার পর ঘন্টা জিমে থাকতে হবে তা নয় ; আপনার দৈনন্দিন কাজকর্মের মাঝেই আপনি সুস্থ থাকার উপায় খুঁজে পেতে পারেন । উদাহরণস্বরূপ কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফেরার পথে বাস থেকে এক স্টপেজ আগেই নেমে হেঁটে যাওয়ার চেষ্টা করুন । শারীরিকভাবে সক্রিয় হওয়ার ফলে হৃদরোগ স্ট্রোক এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিস এর ঝুঁকি হ্রাস পায় । সুতরাং আপনার কাজকর্মে সচেতন হোন । শারীরিক সক্রিয়তা বাড়ানোর পরে উচ্চ মাত্রার শক্তি গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন । যদি কর্মসম্পাদনের পর ক্ষুধাবোধ করেন তাহলে এমন খাদ্য এবং পানীয় নির্বাচন করুন যেগুলোতে কম পরিমানে ক্যালরি বিদ্যমান।
পর্যাপ্ত পানি পান করুন
পানিশূন্যতা দূরীকরণে আমাদের দৈনিক ১.৬-২.০ লিটার তরল পদার্থ পান করা উচিত । যেকোনো অ্যালকোহলবিহিন পানীয় এক্ষেত্রে গণ্য হতে পারে, তবে পানি এবং দুধ অধিক স্বাস্থ্যসম্মত । চিনিযুক্ত কার্বনেটেড কোমল পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে । এগুলোতে উচ্চ মাত্রায় চিনি এবং ক্যালরি বিদ্যমান । এগুলো দাঁতের জন্য ক্ষতিকর । অমিষ্ট ফলের রসও চিনিযুক্ত হয়, দৈনিক ১ গ্লাস (প্রায় ১৫০ মিলি) ফলের রস পান করার
চেষ্টা করুন । উষ্ণ আবহাওয়ায় কাজ করলে আমাদের বেশি পরিমানে পানীয় গ্রহণ করা প্রয়োজন ।
সকালের নাস্তা এড়িয়ে যাবেন না
অনেকে ওজন কমানোর উদ্দেশ্যে সকালের নাস্তা এড়িয়ে চলেন । অথচ গবেষণায় দেখা যায়, সকালের নাস্তা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক । সুষম খাদ্যাভ্যাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো সকালে স্বাস্থ্যসম্মত নাস্তা করা, যা স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ সরবরাহে সহায়তা করে । সম্পূর্ণ খাদ্যশস্য সাথে টুকরো ফল সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর নাস্তা হিসেবে গ্রহণ করা যায় ।